কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরুর কথা

১৮০০-১৯০০ শতকের কথা। ততদিনে ইলেক্ট্রিসিটি আবিষ্কার হয়ে গেছে। নিউটন, কুলম্ব, ম্যাক্সওয়েলের এর মত বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের তত্ত্ব ব্যবহার করে মোটামুটিভাবে বিজ্ঞানের অনেক কিছুই আরামসে ব্যাখ্যা করে ফেলা যাচ্ছে। সূর্যের আলোকে প্রিজমের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে ৭টি রঙে ভাগ করে ফেলা হচ্ছে; একটা বস্তুকে কতটুকু জোরে ছুড়ে মারলে সেটা কতটুকু উঁচুতে উঠবে আর কতদূর পৌছাবে সেটিও নিখুঁতভাবে বলে ফেলা যাচ্ছে। এই সময়টাতে অনেকেই মনে করেছিলো, বিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলির সবগুলিই আবিষ্কার হয়ে গেছে; নতুন করে আবিষ্কারের তেমন কিছুই আর নেই। এমনকি আমেরিকান পদার্থবীদ অ্যালবার্ট মাইকেলসন তো বলেই ফেলেছিলেন-

The more important fundamental laws and facts of physical science have all been discovered, and these are so firmly established that the possibility of their ever being supplanted in consequence of new discoveries is exceedingly remote. - Albert Michelson (1903)


কিন্তু মাইকেলসন জানতেন না আর মাত্র কয়েকটা বছর পরেই তাঁর এই ধারনাটি ভুল প্রমানিত হবে।

প্রকৃতির অনেক কিছু সেইসব তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা গেলেও সমস্যা বাঁধল বিজ্ঞানীরা যখন কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ, আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করেন, প্রচলিত তত্ত্বগুলি ব্যবহার করে পাতার পর পাতা হিসেব কষেও কিছুতেই এগুলির ক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিলো না।

এছাড়া সেসময়ে পদার্থবিজ্ঞানে বস্তুকণাকে বস্তুকণা এবং তরঙ্গকে তরঙ্গ হিসেবেই ধরে নেওয়া হতো। কিন্তু একটি বস্তুকণা যে কখনও কখনও তরঙ্গের মত আচরণ করতে পারে, সেটা তাঁরা ভাবেননি। এমনকি কোন তরঙ্গ (যেমনঃ আলোক তরঙ্গ) যে মাঝেমধ্যে বস্তুর মত আচরণ করতে পারে, সেটাও তাঁদের মাথায় একদমই আসেনি। কিন্তু আণুবীক্ষণিক বস্তুর ক্ষেত্রে সত্যি সত্যিই এরকম ঘটনা হয়ে থাকে।

১৯১১ সালে পরমাণুর গঠন নিয়ে রাদারফোর্ড একটি মডেল প্রস্তাব করেন। কিন্তু প্রচলিত তত্ত্ব ব্যবহার করে সেটি ব্যাখ্যা করার সময় দেখা গেলো সেটি আর কাজ করছে না। প্রচলিত তত্ত্বগুলির এরকম শোচনীয় অবস্থা সেসময়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছিলো। তাঁরা দিনরাত ভেবে ভেবেও কুলকিনারা করতে পারছিলেন না।

১৯০৫ সালে আইনস্টাইন আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার নতুন একটি ব্যাখ্যা দেন আলোক তড়িৎক্রিয়ার এই গবেষনার জন্যই আইনস্টাইন ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। । ব্যাখ্যাটি প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের ধারায় একটি নতুন ধারণার জন্ম দেয়। এরপর ১৯১৩ সালে নিলস বোর আর রাদারফোর্ড মিলে নিউক্লিয়াসের চারপাশে অবস্থিত পরমাণুর চলাচল সম্পর্কে আরেকটি মডেল প্রস্তাব করেন। এবং ১৯২৭ সালে ডেভিসন এবং গার্নার মিলে প্রমান করেন যে আলো একই সাথে কণা এবং তরঙ্গের মত আচরণ করতে পারে।

বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে নতুন নতুন তত্ত্বগুলি বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে দিলো। আস্তে আস্তে তাঁরা বুঝতে পারলেন, আণুবীক্ষণিক বস্তুর ক্ষেত্রে নিউটন, ম্যাক্সওয়েল বা কুলম্বের প্রচলিত সূত্র কাজ করবেনা। এগুলি ব্যাখ্যার জন্য নতুন ভাবে ভাবনা চিন্তা করার প্রয়োজন। এবং সেখান থেকেই জন্ম নিলো পদার্থবিজ্ঞানের নতুন একটি শাখা- "কোয়ান্টাম মেকানিক্স"।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স শাখার উদ্ভাবনের পেছনে তিনটি বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো-

  • কোয়ান্টাইজেশনঃ Quantization কিছু কিছু জিনিসের মান (যেমনঃ শক্তি) সবসময়ই সতন্ত্র হয়ে থাকে এবং একটির মান অন্য কোনটার মানের উপর কোনভাবেই নির্ভর করেনা। এদেরকে বলা হয় কোয়ান্টা।

  • তরঙ্গ ও কণার দ্বৈত অবস্থাঃ Wave-particle duality ক্লাসিকাল মেকানিক্সে তরঙ্গ ও বস্তুকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র কণার ক্ষেত্রে সেটি সত্যি নয়। দেখা গিয়েছে ইলেক্ট্রন একই সাথে তরঙ্গ এবং কণার মত আচরণ করে।

  • সম্ভাব্যতা ও অনিশ্চয়তাঃ Probability & Uncertainty কোয়ান্টাম মেকানিক্সে কোন ক্ষুদ্রকণার অবস্থান এবং ভরবেগ একই সাথে কখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হয়না। এক্ষেত্রে কণাটির অবস্থার শুধু সম্ভাব্যতা হিসেব করা হয়।



কোয়ান্টাম মেকানিক্সে বহুল ব্যবহৃত একটা ধ্রুবক হচ্ছে $h$ বা $\hbar$। যার মাত্রা- $$[h]=ML^2T^{-1}=[Energy]\times[Time]=[Position]\times[Momentum]$$ যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্সে পাওয়া সমাধানে $h\rightarrow 0$ বসানো হয়, তাহলে সেটির সাথে মোটামুটিভাবে ক্লাসিকাল মেকানিক্সের সমাধানের মিল খুজে পাওয়া যায়।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরুর কথা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরুর কথা Reviewed by Dayeen on এপ্রিল ০৫, ২০২০ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.